জয় নৃসিংহ শ্রীনৃসিংহ।
জয় জয় জয় শ্রীনৃসিংহ ॥
উগ্রং বীরং মহাবিষ্ণুং
জ্বলন্তং সর্বতোমুখম্।
নৃসিংহং ভীষণং ভদ্রং
মৃর্ত্যোর্মৃত্যুং নমাম্যহম্ ॥
শ্রীনৃসিংহ, জয় নৃসিংহ, জয় জয় নৃসিংহ।
প্রহ্লাদেশ জয় পদ্মামুখপদ্মভৃঙ্গ ॥
অনুবাদ– জয় শ্রীনৃসিংহদেব, জয় শ্রীনৃসিংহদেব, শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক! জয় হোক! জয় হোক! সর্বদিক প্রজ্জ্বলনকারী উগ্র বীর, মহাবিষ্ণু, যিনি মৃত্যুরও মৃত্যুস্বরূপ সেই ভীষণ ভদ্র শ্রীনৃসিংহদেবকে প্রণাম জানাই। প্রহ্লাদের প্রভু, পদ্মা অর্থাৎ লক্ষ্মীদেবীর মুখপদ্মের প্রতি ভ্রমর রূপ শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, জয় হোক।
নমস্তে নরসিংহায় প্রহ্লাদাহ্লাদ–দায়িনে।
হিরণ্যকশিপোর্বক্ষঃ শিলাটঙ্ক–নখালয়ে ॥
ইতো নৃসিংহঃ পরতো নৃসিংহো
যতো যতো যামি ততো নৃসিংহঃ।
বহির্নৃসিংহো হৃদয়ে নৃসিংহো
নৃসিংহমাদিং শরণং প্রপদ্যে ॥
তব করকমলবরে নখমদ্ভুতশৃঙ্গং
দলিতহিরণ্যকশিপুতনুভৃঙ্গম্।
কেশব ধৃত–নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে ॥
অনুবাদ– হে নৃসিংহদেব, আমি আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। আপনি প্রহ্লাদ মহারাজকে আনন্দ দান করেন এবং পাথর কাটার ধারালো টঙ্কের মতো আপনার নখের দ্বারা আপনি হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদীর্ণ করেছিলেন।
শ্রীনৃসিংহদেব, আপনি এখানে রয়েছেন এবং সেখানেও রয়েছেন, যেখানেই আমি যাই, সেখানেই আমি আপনাকে দর্শন করি। আপনি আমার হৃদয়ে এবং বাইরেও রয়েছেন। তাই আমি আদি পুরুষ, পরমেশ্বর ভগবান, শ্রীনৃসিংহদেবের শরণ গ্রহণ করি।
হে নৃসিংহদেব, আপনার পদ্মের ন্যায় হস্তে নখের অগ্রভাগগুলো অদ্ভুত এবং সেই হস্তে হিরণ্যকশিপুর দেহ ভ্রমরের মতো বিদীর্ণ করেছেন।
হে কেশব, আপনি নৃসিংহদেব রূপ ধারণ করেছেন, হে জগদীশ আপনার জয় হোক
এই জায়গায় এসে আমাদে দুই প্রশ্নের সম্মখীন হতে হয়। জয়দেব কেন বিষ্ণুর এই অবতারকে নরহরি রূপে বর্ণনা করেছেন? সংস্কৃতে হরি শব্দের অর্থ হল সিংহ। তাই কবি নরসিংহ বা নৃসিংহ না লিখে কাব্যিক নরহরি শব্দটির প্রয়োগ করেছেন। দ্বিতীয় প্রশ্ন ওই অদ্ভুত শৃঙ্গের মতো নখ এবং হিরণ্যকশিপুকে নিয়ে। কে এই হিরণ্যকশিপু, তাঁকে বধ করার জন্য এমন নখের প্রয়োজন হল কেন?
সংগৃহীত
পুরাণকথা অনুযায়ী বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে ভগবান বিষ্ণু তাঁর চতুর্থ অবতার-রূপ ধারণ করেছিলেন। পঞ্জিকা অনুসারে আজ, অর্থাৎ ২৫ মে বৈশাখ চতুর্দশী। আজকের তিথিতেই ভগবান বিষ্ণু মর্ত্যে আবির্ভূত হয়েছিল অর্ধ-সিংহ, অর্ধ-মানব অবতারে। সেই জন্য তাঁর এই রূপটি নৃসিংহ বা নরসিংহ নামে প্রসিদ্ধ। আজকের তিথিতে জন্ম হয়েছিল শ্রীনৃসিংহের, তাই এই তিথি পরিচিত নৃসিংহ জয়ন্তী রূপে।
কবি জয়দেব তাঁর গীতগোবিন্দ গ্রন্থের প্রাম্ভে যে দশাবতার স্তোত্র রচনা করেছেন, সেখানে অতি উগ্র নৃসিংহ ভগবানের একটি অত্যাশ্চর্য বিবরণ দেওয়া আছে। জয়দেব লিখেছেন- তব করকমলবরে নখমদ্ভুতশৃ্ঙ্গং দলিতহিরণ্যকশিপুতনুভৃঙ্গম্/কেশব ধৃতনরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে! অর্থাৎ হে কেশব, আপনি যখন নরহরি রূপ ধারণ করেছিলেন, তখন আপনার করকমলের নখের অগ্রভাগ শৃঙ্গের মতো অদ্ভুত রূপ ধারণ করেছিল যার দ্বারা আপনি হিরণ্যকশিপুর তনুভৃঙ্গটি দলিত করেছিলেন!
সংগৃহীত
এই অবতারের জন্মসূত্রটি নিহিত আছে বিষ্ণুর তৃতীয় অবতারের কীর্তিতে। বরাহ রূপে দানব হিরণ্যাক্ষকে বিষ্ণু বধ করায় তাঁর ভাই হিরণ্যকশিপু কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মার কাছ থেকে এক অদ্ভুত বর আদায় করেন। সেই বর অনুযায়ী কোনও মানুষ বা পশুর তাঁকে বধ করার ক্ষমতা ছিল না। শুধু তাই নয়, বরের জোরে দিনে বা রাতে, জলে-স্থলে-আকাশে, ঘরের ভিতরে এবং বাইরে- সব জায়গাতেই তিনি ছিলেন অবধ্য। এমনকী, কোনএ অস্ত্রেরও তাঁকে বধ করার ক্ষমতা ছিল না।
এই দুর্লভ বরের জেরে নিজেকে অমর ভেবে হিরণ্যকশিপু ঘোষণা করে দেন- তাঁর রাজ্যে কেউ বিষ্ণুর পুজো করতে পারবে না। কিন্তু প্রহ্লাদ, তাঁর নিজের ছেলে বাবার এই আদেশ মানেনি। সে বিষ্ণুর উপাসনা কোনও মতেই বন্ধ করেনি। ক্রুদ্ধ হিরণ্যকশিপু যখন নিজে তাকে বধ করতে উদ্যত হন, তখন বিষ্ণু নৃসিংহের রূপে আবির্ভূত হন। এই নৃসিংহের মাথা সিংহের, শরীর মানুষের, অতএব তাঁকে মানুষ বা পশু কোনওটাই বলা যায় না। তিনি হিরণ্যকশিপুকে নিয়ে যান উঠোনের চৌকাঠে যা ঘরও নয়, বাহিরও নয়। গোধূলি, যা কি না দিনও নয়, রাত নয়, এমন সময়ে নৃসিংহ তাঁকে স্থাপন করেন নিজের ঊরুতে, যা জল-স্থল-আকাশের মধ্যে পড়ে না। এর পর নিজের নখ, যা কি না অস্ত্রও নয়, তা দিয়ে নৃসিংহ বুক চিরে ফেলে হিরণ্যকশিপুকে বধ করেন!
সংগৃহীত
শ্রীনৃসিংহ অষ্টোত্তরশত নাম, স্তব ও প্রার্থনা
“শ্রীনৃসিংহ অষ্টোত্তরশত নাম”
১) ওঁ নরসিংহায় নমঃ
২) ওঁ মহাসিংহায় নমঃ
৩) ওঁ দিব্যসিংহায় নমঃ
৪) ওঁ মহাবলায় নমঃ
৫) ওঁ উগ্রসিংহ্যায় নমঃ
৬) ওঁ মহাদেবায় নমঃ
৭) ওঁ স্তম্ভজায় নমঃ
৮) ওঁ উগ্রলোচনায় নমঃ
৯) ওঁ রৌদ্রায় নমঃ
১০) ওঁ সর্বাদ্ভুতায় নমঃ
১১) ওঁ শ্রীমতে নমঃ
১২) ওঁ যোগানন্দায় নমঃ
১৩)ওঁ ত্রিবিক্রমায় নমঃ
১৪) ওঁ হরয়ে নমঃ
১৫) ওঁ কোলাহলায় নমঃ
১৬) ওঁ চক্রিনে নমঃ
১৭) ওঁ বিজয়ায় নমঃ
১৮) ওঁ জয়বর্ধনায় নমঃ
১৯) ওঁ মহানন্দায় নমঃ
২০) ওঁ পঞ্চকাননায় নমঃ
২১) ওঁ পরব্রহ্মণে নমঃ
২২) ওঁ অঘোরায় নমঃ
২৩) ওঁ ঘোরবিক্রমায় নমঃ
২৪) ওঁ জ্বলন্মুখায় নমঃ
২৫) ওঁ মহোজ্বলায় নমঃ
২৬) ওঁ জ্বলমালিনে নমঃ
২৭) ওঁ মহাপ্রভবে নমঃ
২৮) ওঁ নীতলাক্ষায় নমঃ
২৯) ওঁ সহস্রাক্ষায় নমঃ
৩০) ওঁ দুর্নিরীক্ষায় নমঃ
৩১) ওঁ প্রতাপনায় নমঃ
৩২) ওঁ মহাদংষ্ট্রায়ুধায় নমঃ
৩৩) ওঁ প্রজ্ঞায় নমঃ
৩৪) ওঁ চন্ডকোপিনে নমঃ
৩৫) ওঁ সদাশিবায় নমঃ
৩৬) ওঁ হিরণ্যকশিপুধ্বংসিনে নমঃ
৩৭) ওঁ দৈত্যদানবভঞ্জনায় নমঃ
৩৮) ওঁ গুণভদ্রায় নমঃ
৩৯) ওঁ মহাভদ্রায় নমঃ
৪০) ওঁ বলভদ্রায় নমঃ
৪১) ওঁ করালায় নমঃ
৪২) ওঁ বিকরালায় নমঃ
৪৩) ওঁ বিকর্তে নমঃ
৪৪) ওঁ সর্বকর্তৃকায় নমঃ
৪৫)ওঁ শিশুমারায় নমঃ
৪৬) ওঁ ত্রিলোকাত্মনে নমঃ
৪৭) ওঁ ঈশায় নমঃ
৪৮) ওঁ সর্বেশ্বরায় নমঃ
৪৯) ওঁ বিভবে নমঃ
৫০) ওঁ ভৈরবডম্বরায় নমঃ
৫১) ওঁ দিব্যায় নমঃ
৫২) ওঁ অচ্যুতায় নমঃ
৫৩) ওঁ মাধবায় নমঃ
৫৪) ওঁ অধোক্ষজায় নমঃ
৫৫) ওঁ অক্ষরায় নমঃ
৫৬) ওঁ সর্বায় নমঃ
৫৭) ওঁ বনমালিনে নমঃ
৫৮) ওঁ বরপ্রদায় নমঃ
৫৯) ওঁ বিশ্বম্ভরায় নমঃ
৬০) ওঁ অদ্ভুতায় নমঃ
৬১) ওঁ ভব্যায় নমঃ
৬২) ওঁ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ
৬৩) ওঁ পুরুষোত্তমায় নমঃ
৬৪)ওঁ অনঘাস্ত্রায় নমঃ
৬৫) ওঁ নখাস্ত্রায় নমঃ
৬৬) ওঁ সূর্যজ্যোতিষে নমঃ
৬৭) ওঁ সুরেশ্বরায় নমঃ
৬৮) ওঁ সহস্রবাহবে নমঃ
৬৯) ওঁ সর্বজ্ঞায় নমঃ
৭০) ওঁ সর্বসিন্ধিপ্রদায়কায় নমঃ
৭১) ওঁ বজ্রদংষ্টায় নমঃ
৭২) ওঁ বজ্রনখায় নমঃ
৭৩) ওঁ পরন্তপায় নমঃ
৭৪) ওঁ সর্বমন্ত্রৈকরূপায় নমঃ
৭৫) ওঁ সর্বযন্ত্রাত্মকায় নমঃ
৭৬) ওঁ সর্বযন্ত্রবিদারকায় নমঃ
৭৭) ওঁ অব্যক্তায় নমঃ
৭৮) ওঁ সুব্যক্তায় নমঃ
৭৯) ওঁ ভক্তবৎসলায় নমঃ
৮০) ওঁ বৈশাখশুক্লোদ্ভুত্যায় নমঃ
৮১) ওঁ শরণাগত বৎসলায় নমঃ
৮২) ওঁ উদারকীর্তয়ে নমঃ
৮৩) ওঁ পূন্যাত্মনে নমঃ
৮৪) ওঁ মহাত্মনে নমঃ
৮৫) ওঁ চন্ডবিক্রমায় নমঃ
৮৬) ওঁ বেদত্রয় প্রপূজ্যায় নমঃ
৮৭) ওঁ ভগবতে নমঃ
৮৮) ওঁ পরমেশ্বরায় নমঃ
৮৯) ওঁ শ্রীবৎসাঙ্কায় নমঃ
৯০) ওঁ শ্রীনিবাসায় নমঃ
৯১) ওঁ জগদ্ ব্যাপিনে নমঃ
৯২) ওঁ জগন্মায় নমঃ
৯৩) ওঁ জগতপালায় নমঃ
৯৪) ওঁ জগন্নাাথায় নমঃ
৯৫) ওঁ মহাকায়ায় নমঃ
৯৬) ওঁ দ্বিরূপভৃতে নমঃ
৯৭) ওঁ পরমাত্মনে নমঃ
৯৮) ওঁ পরংজ্যোতিষে নমঃ
৯৯) ওঁ নির্গুনায় নমঃ
১০০) ওঁ নৃকেশরীণে নমঃ
১০১) ওঁ পরমাত্মায় নমঃ
১০২) ওঁ পরতত্ত্বায় নমঃ
১০৩) ওঁ পরমধান্মে নমঃ
১০৪) ওঁ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহায় নমঃ
১০৫) ওঁ সর্বাত্মনে নমঃ
১০৬) ওঁ ধীরায় নমঃ
১০৭) ওঁ প্রহ্লাদপালকায় নমঃ
১০৮) ওঁ লক্ষ্মীনৃসিংহায় নমঃ
সংগৃহীত
শ্রীনৃসিংহদেবের স্তব ও প্রার্থনা
জয় নৃসিংহ শ্রীনৃসিংহ।
জয় জয় জয় শ্রীনৃসিংহ ॥
উগ্রং বীরং মহাবিষ্ণুং
জ্বলন্তং সর্বতোমুখম্।
নৃসিংহং ভীষণং ভদ্রং
মৃর্ত্যোর্মৃত্যুং নমাম্যহম্ ॥
শ্রীনৃসিংহ, জয় নৃসিংহ, জয় জয় নৃসিংহ।
প্রহ্লাদেশ জয় পদ্মামুখপদ্মভৃঙ্গ ॥
অনুবাদ– জয় শ্রীনৃসিংহদেব, জয় শ্রীনৃসিংহদেব, শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক! জয় হোক! জয় হোক! সর্বদিক প্রজ্জ্বলনকারী উগ্র বীর, মহাবিষ্ণু, যিনি মৃত্যুরও মৃত্যুস্বরূপ সেই ভীষণ ভদ্র শ্রীনৃসিংহদেবকে প্রণাম জানাই। প্রহ্লাদের প্রভু, পদ্মা অর্থাৎ লক্ষ্মীদেবীর মুখপদ্মের প্রতি ভ্রমর রূপ শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, শ্রীনৃসিংহদেবের জয় হোক, জয় হোক।
নমস্তে নরসিংহায় প্রহ্লাদাহ্লাদ–দায়িনে।
হিরণ্যকশিপোর্বক্ষঃ শিলাটঙ্ক–নখালয়ে ॥
ইতো নৃসিংহঃ পরতো নৃসিংহো
যতো যতো যামি ততো নৃসিংহঃ।
বহির্নৃসিংহো হৃদয়ে নৃসিংহো
নৃসিংহমাদিং শরণং প্রপদ্যে ॥
তব করকমলবরে নখমদ্ভুতশৃঙ্গং
দলিতহিরণ্যকশিপুতনুভৃঙ্গম্।
কেশব ধৃত–নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে ॥
অনুবাদ– হে নৃসিংহদেব, আমি আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। আপনি প্রহ্লাদ মহারাজকে আনন্দ দান করেন এবং পাথর কাটার ধারালো টঙ্কের মতো আপনার নখের দ্বারা আপনি হিরণ্যকশিপুর বক্ষ বিদীর্ণ করেছিলেন।
শ্রীনৃসিংহদেব, আপনি এখানে রয়েছেন এবং সেখানেও রয়েছেন, যেখানেই আমি যাই, সেখানেই আমি আপনাকে দর্শন করি। আপনি আমার হৃদয়ে এবং বাইরেও রয়েছেন। তাই আমি আদি পুরুষ, পরমেশ্বর ভগবান, শ্রীনৃসিংহদেবের শরণ গ্রহণ করি।
হে নৃসিংহদেব, আপনার পদ্মের ন্যায় হস্তে নখের অগ্রভাগগুলো অদ্ভুত এবং সেই হস্তে হিরণ্যকশিপুর দেহ ভ্রমরের মতো বিদীর্ণ করেছেন।
হে কেশব, আপনি নৃসিংহদেব রূপ ধারণ করেছেন, হে জগদীশ আপনার জয় হোক।
সংগৃহীত